একুশ শতকের প্রথম বিপর্যয় | করোনা ভাইরাস
পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার রব মাঝে মাঝেই শোনা যায়। গত ২০ বছরে সব থেকে আলোচিত দুইটা সংবাদ ছিল ২০০০ এবং ২০১২ সালের পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যৎ বাণী। কিছু কিছু লোক তা নিয়ে মাতামাতি করলেও তার প্রভাব ছিল নগণ্য। তবে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে হলিউড যতগুলো সিনেমা তৈরি করেছে তা এ সংক্রান্ত ঝুঁকির ঘটনা থেকে অনেক বেশি।
পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার রব মাঝে মাঝেই শোনা যায়। গত ২০ বছরে সব থেকে আলোচিত দুইটা সংবাদ ছিল ২০০০ এবং ২০১২ সালের পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যৎ বাণী। কিছু কিছু লোক তা নিয়ে মাতামাতি করলেও তার প্রভাব ছিল নগণ্য। তবে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে হলিউড যতগুলো সিনেমা তৈরি করেছে তা এ সংক্রান্ত ঝুঁকির ঘটনা থেকে অনেক বেশি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অনেক বারই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা এসেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত না হলেও পৃথিবীকে আতঙ্কিত করার মতো ঘটনা কম ছিল না। দেশে দেশে যুদ্ধ, চেরনোবিল দুর্ঘটনা, সোভিয়েত বনাম যুক্তরাষ্ট্রের শীতল যুদ্ধ, অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সুনামির মতো ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পরে বিশ্ব ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, পররাষ্ট্র এবং সামাজিক ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক আগ্রাসন চলেছে। সঙ্গে আরব বসন্ত ছিল। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রে বড় বিপর্যয় হয়েছে। এ ঘটনাগুলোর কোনোটাই সারা বিশ্বকে এক যোগে সম্পৃক্ত করে নি। ঘটনাগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। কোনো একটা দেশে বা কোনো একটা অঞ্চলেই শুধু আক্রান্ত করেছে। বিগত বছরগুলোতে সারা বিশ্বকে সম্পৃক্ত করার মতো সম্ভবত একটাই ঘটনা ছিল সেটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু যারা এর জন্য দায়ী তারা এটা অস্বীকার করে এসেছে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা বুঝতেই পারেনি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে বোঝা কঠিন।
তবে বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বকে এক যোগে আতঙ্কিত করতে পেরেছে একমাত্র করোনা ভাইরাস এবং এর দ্বারা সংঘটিত কোভিড-১৯ রোগ। ধনী থেকে দরিদ্র সকলেই এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষ কেউই করোনা ভাইরাসের থেকে নিরাপদ নয়।
প্রতিদিনই পরিসংখ্যানের খাতায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব থেকে বিপদে পড়বেন। কারণ তাদের পক্ষে ধনীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সব থেকে বিপদে পড়বেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই মহামারি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেবে। কারণ তখন আক্রান্ত না হয়েও খাদ্য বা চিকিৎসা সংকটে আরও অনেক মানুষ মারা পড়বেন। আর আমাদের মতো দুর্বল অর্থনীতি বা চিকিৎসা সেবার দেশে এই মহামারি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা ভাবতে গেলেও শিউরে উঠতে হয়।
এই বিপর্যয় কত বিস্তৃত হবে বা কত দিন ধরে চলবে তা সময়েই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে সবার এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। এই এগিয়ে আসা মানে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। নিজেরা যাতে এই ভাইরাসের বাহক না হয়ে যাই তার জন্য জন সমাগম এড়িয়ে চলা, নিজেদের গৃহবন্দী করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। আর একান্ত আক্রান্ত হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসাটা জরুরি।
এই ভাইরাস- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- এর মধ্যেই চীনে অনেক মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাসটা কী?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।সারাবিশ্বে এরই মধ্যে ১৫০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে ৭ হাজারের বেশি মানুষের।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: 'চায়না ভাইরাস', 'করোনাভাইরাস', '২০১৯ এনকভ', 'নতুন ভাইরাস', 'রহস্য ভাইরাস' ইত্যাদি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা 'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
রোগের লক্ষণ কী:
রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে।
সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ দেখা দেয়, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।
সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় নেয়।
২০১৯
সালের
করোনাভাইরাসঘটিত ব্যাধির (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত নিবন্ধের জন্য,
২০১৯–২০
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী দেখুন।
করোনাভাইরাস
গ্রুপ:৪র্থ গ্রুপ ((+) ssRNA)
বর্গ:নিদুভাইরাস
পরিবার: করোনাভাইরদা
উপপরিবার:করোনাভাইরিনা
গণ:
- আলফাকরোনাভাইরাস
- বেটাকরোনাভাইরাস
- ডেল্টাকরোনাভাইরাস
গামাকরোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস হল
একই
শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস
যারা
স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং
পাখি আক্রান্ত করে।
মানুষের মধ্যে
করোনাভাইরাস শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়।
এই
সংক্রমণের লক্ষণ
মৃদু
হতে
পারে,
অনেকসময় যা
সাধারণ ঠাণ্ডাজ্বরের ন্যায়
মনে
হয়
(এছাড়া
অন্য
কিছুও
হতে
পারে,
যেমন
রাইনোভাইরাস), কিছু
ক্ষেত্রে তা
অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য
হয়ে
থাকে,
যেমন
সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯।
অন্যান্য প্রজাতিতে এই
লক্ষণের তারতম্য দেখা
যায়।
যেমন
মুরগির
মধ্যে
এটা
উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়,
আবার
গরু
ও
শূকরে
এটি
ডায়রিয়া সৃষ্টি
করে।
মানবদেহে সৃষ্ট
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত
কোনো
ভ্যাক্সিন বা
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও
আবিষ্কৃত হয়নি।
করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের
নিদুভাইরাস বর্গের
করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য।[১][২] তারা পজিটিভ সেন্স একক
সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা
এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর
জিনোমের আকার
সাধারণত ২৭
থেকে
৩৪
কিলো বেস-পেয়ার (kilo
base-pair) এর
মধ্যে
হয়ে
থাকে
যা
এ
ধরনের
আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে
সর্ববৃহৎ। করোনাভাইরাস শব্দটি
ল্যাটিন করোনা থেকে
নেওয়া
হয়েছে
যার
অর্থ
মুকুট।
কারণ
দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির ক্লাব-আকৃতির প্রোটিন স্পাইকের কারণে
একে
দেখতে
অনেকটা
মুকুট
বা
সৌর করোনার মত।
ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ
থাকে
যা
ভাইরাল
স্পাইক
পেপলোমার দ্বারা
এর
অঙ্গসংস্থান গঠন
করে।
এ
প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া
টিস্যু
বিনষ্ট
করে।
ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রুপ
প্রকাশ
করে।
ধারনা
করা
হয়,
প্রাণীর দেহ
থেকে
এই
ভাইরাস
প্রথম
মানবদেহে প্রবেশ
করে।
ইতিহাস
করোনাভাইরাস ১৯৬০-এর দশকে প্রথম
আবিষ্কৃত হয়।
প্রথমদিকে মুরগির
মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে
এটি প্রথম দেখা
যায়। পরে সাধারণ
সর্দি-হাঁচি-কাশিতে
আক্রান্ত রোগীদের
মধ্যে এরকম দুই
ধরনের ভাইরাস পাওয়া
যায়। মানুষের মধ্যে
পাওয়া ভাইরাস দুটি
‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’
এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস
ওসি৪৩’ নামে নামকরণ
করা হয়।এরপর থেকে
বিভিন্ন সময়
ভাইরাসটির আরো
বেশ কিছু প্রজাতি
পাওয়া যায় যার
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
২০০৩ সালে। ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে
‘এইচসিওভি এনএল৬৩’,
২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’,
২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ
২০১৯ সাল চীনে
‘নোভেল করোনাভাইরাস’। এগুলোর
মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের
ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর
সংক্রমণ দেখা
দেয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণ
- জ্বর
- অবসাদ
- শুষ্ক কাশি
- বমি হওয়া
- শ্বাস কষ্ট
- গলা ব্যাথা
- অঙ্গ বিকল হওয়া
- মাথা ব্যাথা
- পেটের সমস্যা
- কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব (২০১৯-২০২০)
মূল নিবন্ধসমূহ: ২০১৯ সালের করোনাভাইরাসঘটিত
ব্যাধির প্রাদুর্ভাব (২০১৯-২০২০) এবং
দেশ অনুযায়ী করোনাভাইরাসের
প্রাদুর্ভাব (২০১৯-২০২০)
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে
চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের
একটি
প্রজাতির
সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। ২০২০
সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত
চীনের সাথে সাথে ১২১টিরও
বেশি দেশ ও অঞ্চলে
সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়
যাতে ৮,৯৬০ জনের
বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
নিশ্চিতভাবে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে
আরো ২,১৯,৩৮৪
জন রোগী এ ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়েছে এবং ৮৫,৭৪৯ জনের বেশি
লোক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেছে
বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির সাথে ৭০% জিনগত মিল পাওয়া যায়।[অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধীতা করেন।
শব্দতত্ত্ব
“করোনাভাইরাস” নামটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক κορώνη korṓnē থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”। নামটি ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ভিরিয়নের (ভাইরাসের সংক্রামক আকার) বৈশিষ্ট্যমূলক উপস্থিতিকে নির্দেশ করে। ভিরিয়নের বিশাল কন্দাকৃতি পৃষ্ঠ অভিক্ষেপযুক্ত প্রান্ত রয়েছে যা মুকুটের স্মৃতি তৈরি করে। এর অঙ্গসংস্থান ভাইরাল স্পাইক পেপলোমারের দ্বারা তৈরি হয়েছে যেগুলো মূলত ভাইরাসের পৃষ্ঠে অবস্থিত প্রোটিন।
অঙ্গসংস্থান
করোনাভাইরাস বাল্বাস পৃষ্ঠের সাথে
প্লিওমরফিক গোলাকার কণাসদৃশ ভাইরাস কণার
ব্যাস
প্রায়
১২০
ন্যানোমিটার। ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফগুলিতে ভাইরাসের আচ্ছাদনটি ইলেক্ট্রন গাঢ়
শাঁসগুলির একটি
পৃথক
জোড়া
হিসাবে
উপস্থিত হয়।
সকল
প্রজাতির করোনাভাইরাসে সাধারণত স্পাইক
(এস),
এনভেলপ
(ই),
মেমব্রেন (এম)
এবং
নিউক্লিওক্যাপসিড (এন)
নামক
চার
ধরনের
প্রোটিন দেখা
যায়।
ভাইরাল
আচ্ছাদনে একটি
লিপিড
বাইলেয়ার থাকে
যেখানে
ঝিল্লি
(এম),
আচ্ছাদন (ই)
এবং
স্পাইক
(এস)
কাঠামোগত প্রোটিন নোঙ্গর
থাকে।করোনাভাইরাসগুলির একটি
উপসেট
(বিশেষত
বেটাকোরোনাভাইরাস "সাবগ্রুপ এ"-এর সদস্যদের) হিমাগ্লুটিনিন অ্যাস্টেরেস নামে
একটি
সংক্ষিপ্ত স্পাইক-জাতীয় পৃষ্ঠ-প্রোটিন রয়েছে।
সঞ্চালন
হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট পানিকণার ফলে আক্রান্তর সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সাথে আক্রমণের শিকার হতে যাওয়ার কোষের হোস্ট কোষের গ্রাহকপ্রান্তের মিথস্ক্রিয়াই টিস্যু ট্রপিজম, সংক্রাম্যতা এবং প্রজাতির ব্যাপ্তি ইত্যাদির ব্যাপারে তথ্য দেয়। উদাহরণস্বরূপ, সার্স করোনাভাইরাস অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরিত এনজাইম ২ (এসিই ২) মানবকোষে সংযুক্তির মাধ্যমে সংক্রামণ ঘটায়।শ্রেণিবিন্যাস
করোনাভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম
Orthocoronavirinae (অর্থোকরোনাভিরিনি) বা
Coronavirinae (করোনাভিরিন্যা) করোনাভাইরাস করোনাভিরিডি পরিবারের সদস্য।
- গণ: Alphacoronavirus (আলফাকরোনাভাইরাস)
- প্রজাতি: Human coronavirus 229E (হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ই), Human coronavirus NL63 (হিউম্যান করোনাভাইরাস এনএল৬৩), Miniopterus bat coronavirus 1, Miniopterus bat coronavirus HKU8, Porcine epidemic diarrhea virus, Rhinolophus bat coronavirus HKU2, Scotophilus bat coronavirus 512
- গণ Betacoronavirus (বেটাকরোনাভাইরাস); প্রজাতির ধরন: Murine coronavirus
- প্রজাতি: Betacoronavirus 1, Human coronavirus HKU1, Murine coronavirus, Pipistrellus bat coronavirus HKU5, Rousettus bat coronavirus HKU9, Severe acute respiratory syndrome-related coronavirus, Severe acute respiratory syndrome coronavirus 2, Tylonycteris bat coronavirus HKU4, Middle East respiratory syndrome-related coronavirus, Human coronavirus OC43, Hedgehog coronavirus 1 (EriCoV)
- গণ Gammacoronavirus (গামাকরোনাভাইরাস); প্রজাতির ধরন: Infectious bronchitis virus
- গণ Deltacoronavirus (ডেল্টাকরোনাভাইরাস); প্রজাতির ধরন: Bulbul coronavirus HKU11
বিবর্তন
সকল প্রকার করোনাভাইরাসের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ (মোস্ট রিসেন্ট কমন অ্যানসেস্টর বা এমআরসিএ) এর উৎপত্তি ঘটে আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।[১৮] আলফাকরোনাভাইরাসের এমআরসিএ ধারা ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, বেটাকরোনাভাইরাসের ধারা ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, গামাকরোনাভাইরাসের ধারা ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ডেল্টাকরোনাভাইরাসের ধারা ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছে। বাদুর এবং পাখির মত উড়ন্ত উষ্ণরক্তধারী মেরুদণ্ডী প্রাণীরাই করোনাভাইরাস জিন-উৎসের বিবর্তন এবং ছড়িয়ে দেওয়ার আদর্শ বাহক (বাদুড়ের জন্য আলফা ও বেটা করোনাভাইরাস, পাখির জন্য গামা এবং ডেল্টাকরোনাভাইরাস)।বোভাইন করোনাভাইরাস এবং ক্যানাইন শ্বসনযন্ত্রের করোনাভাইরাসের শেষ পূর্বপুরুষ এসেছে (১৯৫০) এর দিকে। বোভাইন এবং মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩ ১৮৯০-এর দিকে ছড়ায়। বোভাইন করোনাভাইরাস ছড়ায় ইকুয়াইন করোনাভাইরাস প্রজাতি থেকে, ১৮ শতকের শেষদিকে।
মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩-এর এমআরসিএ ১৯৫০-এর দিকে উৎপত্তি লাভ করে।
মার্স-কোভি কিছু বাদুড়ের করোনাভাইরাস প্রজাতির সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও ধারণা করা হয় বেশকিছু শতাব্দী আগে এর উৎপত্তি ঘটে। মানব করোনাভাইরাস এনএল৬৩ এবং একটি বাদুড়ের করোনাভাইরাসের এমআরসিএ ৫৬৩-৮২২ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করে।
১৯৮৬ সালে বাদুড় করোনাভাইরাস এবং সার্স-কোভির সাথে সম্পর্কযুক্ত ভাইরাস উৎপত্তি লাভ করে। বাদুড়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত সার্স ভাইরাসের বিবর্তনের একটু যাত্রাপথ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, করোনাভাইরাস দীর্ঘসময় ধরে বাদুড়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে এবং সার্স-কোভির উত্তরসূরীরা প্রথমে হিপোসিডারিডি গণের প্রজাতির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এরপরে তা রাইনোলফিডির প্রজাতির মধ্যে, পরবর্তীতে ভামের মধ্যে এটি ছড়ায় এবং সর্বশেষে ছড়ায় মানুষের মধ্যে।
আলপাকা করোনাভাইরাস এবং মানব করোনাভাইরাস ২২৯ই ১৯৬০-এর দিকে উৎপত্তি লাভ করে।
মানব করোনাভাইরাস
ক্ষতির
সম্ভাবনার দিক
থেকে
করোনাভাইরাস বেশ
বৈচিত্র্যময়। কিছু প্রকরণ
আক্রান্তের ৩০%-এরও বেশিকে মেরে
ফেলে
(যেমন
মার্স-কোভি), কিছু
প্রকরণ
মোটামুটি নিরীহ,
যেমন
সাধারণ
ঠাণ্ডা। করোনাভাইরাস ঠাণ্ডার পাশাপাশি বড়
ধরণের
কিছু
উপসর্গ
সৃষ্টি
করে,
যেমন
জ্বর, ফুলে
যাওয়া
অ্যাডিনয়েডের ফলে
গলা ব্যথা। এগুলো সাধারণত শীতকালে এবং
বসন্ত
ঋতুর
শুরুর
দিকে
হয়। করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটাতে
পারে
(সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া অথবা
পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত
নিউমোনিয়া) এবং
ব্রঙ্কাইটিসের (সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কাইটিস অথবা
পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত
ব্রঙ্কাইটিস) মাধ্যমে। ২০০৩ সালে
সার্স-কোভি ছড়ানোর পর
থেকে
করোনাভাইরাস পরিচিতি পায়। এই
ভাইরাস
একইসাথে সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)
এবং
উর্ধ্ব এবং
নিম্ন শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়।
মানব
করোনাভাইরাসের নিম্নলিখিত প্রকরণ
আবিষ্কৃত হয়েছে:
- মানব করোনাভাইরাস ২২৯ই (এইচকোভি-২২৯ই)
- মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩ (এইচকোভি-ওসি৪৩)
- সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স-কোভি)
- মানব করোনাভাইরাস এনএল৬৩ (এইচকোভি-এনএল৬৩, নিউ হ্যাভেন করোনাভাইরাস)
- মানব করোনাভাইরাস এইচকেইউ১
- মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-সম্পর্কিত করোনাভাইরাস (মার্স-কোভি), পূর্বে “নোভেল করোনাভাইরাস ২০১২” এবং “এইচকোভি-ইএমসি” হিসেবে পরিচিত ছিল
- সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভি-২), পূর্বে “২০১৯-কোভি” বা “নোভেল করোনাভাইরাস ২০১৯” হিসেবে পরিচিত ছিল
করোনাভাইরাস এইচকোভি-২২৯ই,
-এনএল৬৩,
-ওসি৪৩
এবং
-এইচকেইউআই মানুষের মধ্যে
ক্রমাগত ছড়ায়
এবং
বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং
শিশুদের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়।
সূত্রঃ অনলাইন।
No comments