Header Ads

আমার জগতে আপনাকে স্বাগতম

মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু।

 কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু ঘটছে অনেক রোগীর।মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু।



মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু। রোগের প্রাদুর্ভাব এবার অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। একই সঙ্গে পাল্টে গেছে রোগের ধরন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরও রোগীর শরীরে থাকা জীবাণুর ধরন বুঝতে সময় লাগছে চিকিৎসকদের। ততক্ষণে রোগীর শরীরে থাকা ডেঙ্গুর জীবাণু দ্রুত আরেক রূপ ধারণ করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আঘাত হানছে রোগীর ব্রেইন, হার্ট ও লিভারে। দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে আক্রান্তকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। রোগের ধরন পাল্টে যাওয়ার কারণে চিকিৎসা দিতেও সমস্যায় হচ্ছে চিকিৎসকদের। ডেঙ্গুর জীবাণু আগের তুলনায় বেশ শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। জ্বর হওয়ার পর পরই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছে রোগী। কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু ঘটছে অনেক রোগীর। প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের মৌসুম যেন সারা বছর। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হওয়ার হিড়িক পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ঘণ্টায় চার জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ১ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ১৮০ জন। মারা গেছেন ৩ জন। আর পাঁচ জনের মৃতদেহ ডেঙ্গু রোগী সন্দেহে রেখে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরে মোট আক্রান্তের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ৪৫ জন, মে’তে ১৫৩ এবং জুনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর ১ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২১৬ জন। অর্থাৎ এই ৯ দিনে গড়ে দৈনিক ১৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেসরকারী হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা। এই মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এটি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো ডেঙ্গু রোগের সরাসরি কোন প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ আরও জানান, নগরীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাঁশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। আর আক্রান্তরা পিঠ, ঘাড়, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথা বলে থাকে।
ডেঙ্গুর ধরন পাল্টাচ্ছে ॥ দেশে ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর গতি প্রকৃতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালানো দরকার।
সব ডেঙ্গুই প্রাণঘাতী হয় না। চার ধরনের ডেঙ্গু (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ ও ডিইএনভি-৪) মধ্যে ঠিক কোন ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি, তা খতিয়ে দেখা জরুরী। এখন জ্বর হলে মানুষ যেমন প্রথমে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভয় পায়, তেমনি ডাক্তাররাও তা শনাক্ত করে চিকিৎসা করেন। কিন্তু যার ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, তা ঠিক কোন টাইপের ডেঙ্গু, তা শনাক্ত করা হচ্ছে না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকার। চিকিৎসা প্রদানের সময় চিকিৎসকদের ওই গাইডলাইনটি অনুসরণ করা দরকার। অনুসরণ না করলেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে রোগীর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরামর্শক অধ্যাপক ডাঃ মাহামুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর কারণে মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত হলে তা খুবই বিপজ্জনক। অনেক চিকিৎসকের পক্ষে তা দ্রুত বুঝে ওঠা কঠিন। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার।
সচেতন থাকলে আতঙ্কের কিছু নেই ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য রাজধানীতে ডেঙ্গুর এ ধরনের প্রকোপ এক ধরনের বাস্তবতা। প্রত্যেক নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। জ¦র হলে সাধারণ জ¦র মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অধিক সচেতন হতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৫৫৫১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৯৩ জন, ২০০১ সালে ২৪৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৬২৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১০ জন, ২০০৪ সালে ৩৪৩৪ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৩ জন, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১০৪৮ জন ও মৃত্যু ৪ জন, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২২০০ জন ও মৃত্যু ঘটে ১১ জনের। এভাবে ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন এবং ২০১০ সালে ৪০৯ আক্রান্ত হলেও ওই চারটি বছরে কেউ মারা যায়নি। আর ২০১১ সালে ১৩৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১ জন, ২০১৩ সালে ১৭৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ২ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন আক্রান্ত, ২০১৫ সালে ৩১৬২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১৬ সালে ৬০৬০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৪ জন, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৭৬৯ ও মৃত্যু ৮ জন এবং ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু ঘটে। 

No comments

Theme images by enot-poloskun. Powered by Blogger.